Get Flower Effect

সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৩

অপার সম্ভাবনার নিঝুমদ্বীপ...

নোয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিণের উপজেলা হাতিয়া হাতিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে জাহাজমারা ইউনিয়ন থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলে জেগে উঠেছে চির সবুজের দ্বীপ নিঝুমদ্বীপ মাছ, গাছ, পাখ-পাখালি আর সোনার হরিণের সম্পদ ভান্ডার নিঝুমদ্বীপ

১৯৬০ সালের দিকে কিছু সংখ্যক জেলে দ্বীপের বালুর উচু ঢিবি দেখে এর নাম দেন বালুয়ার চর এক সময় একদল জরিপকারী দ্বীপটি জরিপ করতে আসেন তাদের সহায়তা করেন ওসমান নামের এক লোক তখন জরিপকারীরা এই দ্বীপের নাম রাখেন চর ওসমান ১৯৭০ সালের ঘুর্ণিঝড়ে দ্বীপটি জনমানবহীন হয়ে পড়ে দীর্ঘ বছর এখানে কোন বসতি গড়ে ওঠেনি পরে ১৯৭৩ সালে হাতিয়ার তৎকালীন সাংসদ মরহুম আমিরুল ইসলাম কালাম দ্বীপটিতে যান দ্বীপের শান্ত সমাহিত বিদগ্ধ সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি দ্বীপটির নাম রাখেন নিঝুমদ্বীপ তখন থেকে এটি জনমনে নিঝুমদ্বীপ হিসেবে পরিচিতি পায়

নিঝুমদ্বীপে বর্তমান জনসংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি ইতোপূর্বে নিঝুমদ্বীপ একটি ওয়ার্ড ছিল গত ২০০৮ সালে এটি সরকার কর্তৃক ইউনিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি পায় বর্তমানে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের প্রশাসক নওমুসলিম তাজুল ইসলাম এখানে রয়েছে ৯টি গুচ্ছ গ্রাম গ্রামগুলোর নাম খুব সুন্দর যেমন-বসুন্ধরা, ছায়াবীথি, ধানসিঁড়ি, সূর্যোদয়, পূর্বাচল, আনন্দ, যুগান্তর, আগমনী বাতায়ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঝড়, ঝঞ্চা, জলোচ্ছ্বাস দ্বীপের মানুষের নিত্যসঙ্গী এখানকার মানুষ বুকভরা সাহস নিয়ে এসব বিপদ মোকাবেলা করে

নিঝুমদ্বীপের দক্ষিণে রয়েছে সমুদ্র সৈকত এই দ্বীপে রয়েছে বন-বনানী, বন্যপ্রাণী, খাল আছে জাতীয় উদ্যান হরিণতো আছেই এছাড়া শীতে আসে অতিথি পাখিরা খালপাড়, নদীকূল, সমুদ্রতটের বন-বনানীর দৃশ্য তুলনাহীন এখানকার সবুজ-শ্যামল শান্ত পরিবেশ মানুষকে আকৃষ্ট করে দ্বীপের দক্ষিণ দিকের সাদা বালুর সমুদ্র সৈকত হাতছানি দিয়ে ডাকে সাগরের নীল জল, নীল জলের উথাল-পাথাল ঢেউ মন কেড়ে নেয় দ্বীপের সূর্য উঠা ডুবে যাওয়ার দৃশ্য খুবই সুন্দর পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলো সমুদ্র সৈকতের বালু বেলায় মায়াবী পরিবেশ তৈরি করে

দ্বীপের বনে রয়েছে হাজার হাজার চিত্রল হরিণ ১৯৭৮ সালে এখানে ছাড়া হয়েছিল জোড়া হরিণ বিগত সময়ে হরিণের সংখ্যা বেড়েছে অনেক বর্তমানে হরিণের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এতে বনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে জানান, প্রথম আলো পত্রিকার হাতিয়া প্রতিনিধি মানিক মজুমদার তিনি সরকারের কাছে হরিণ রপ্তানী প্রকল্প ঘোষণার দাবি জানান এছাড়াও বনের মধ্যে বন্য কুকুরের উপদ্রবে হরিণগুলো মূলদ্বীপের আলাদীগ্রাম, কাজীরবাজার বনে এসে আশ্রয় নেয় এতে স্থানীয় কৃষকের ফসল নষ্ট হয়

নিঝুমদ্বীপে রয়েছে অনেক বালির ঢিবি এই বালির সাথে রয়েছে দামি খনিজ সম্পদ প্রখাত খনি বিজ্ঞানী . মফিজের মতে নিঝুমদ্বীপের বালিতে সিলিকনের পরিমান কক্সবাজারের চেয়েও অনেক বেশী বলা হয়, “নিঝুমদ্বীপের বালি সোনার চেয়েও দামি
নিঝুমদ্বীপ হাতিয়ার মূলদ্বীপ হতে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ কেউ এখানে আসতে হলে নৌকারখেওয়ায়আসতে হবে তবে সমস্যা হল একটি মাত্র নৌকায় অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণভাবে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, কাদামাটি মাড়িয়ে নৌকায় ওঠা-নামা করার কষ্ট

নিঝুমদ্বীপে স্থল যাতায়াতের জন্য এখনও পর্যন্ত ভাল মানের কোন রাস্তা হয়নি শুধু মাত্র কয়েকটি রিক্সা ছাড়া আর কোন যানবাহন এখানে নেই ভাল মানের কোন আবাসিক হোটেল নেই বললেই চলে তবে ইদানিং দুএকটি পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হলেও পর্যটক বেড়ে গেলে জায়গা পাওয়া যায়না

নিঝুমদ্বীপে কোন স্বাস্থ্য ক্লিনিক নেই দুএকটি ফার্মেসী দোকান আছে এখানকার মানুষ এখনও আদিম যুগের মত গাছের শিকর বাকর আর মৌলবী ফুকফাকের উপর ভরসা করে চলে এখানে শিক্ষার হার হতাশাব্যঞ্জক তবে মানুষগুলো শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন প্রয়োজনীয় শিক্ষা সহায়তা দিলে এখানে শিক্ষার হার বাড়ানো সম্ভব নিঝুমদ্বীপে ছিনতাই নেই, সন্ত্রাস নেই, নেই কোন চাঁদাবাজি চুরি, ডাকাতি নেই বললেই চলে এখানে কোন যান্ত্রিক যানবাহন নেই নেই শব্দ দূষণ একেবারেই শান্ত পরিবেশ এখানে উড়ে আসে অতিথি পাখি অতিথি পাখিরা নিরাপদে বসবাস করে কেউ ওদের শত্রু নয় নিঝুমদ্বীপের মানুষগুলো সবাই সাদা মনের মানুষ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Flying Twitter Bird Widget By bdtechzone.com